দেয়ালিকা তৈরীর নিয়ম - সুন্দর সুন্দর দেয়ালিকা ডিজাইন
প্রতিভার কোনো সীমা হয় না। আর যদি কথা বলি বাংলার জনগণের ব্যাপারে। তাহলে এই বাঙালি জাতি অনেক প্রতিভাবান। জীবনের প্রত্যেক মুহূর্তে এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এই বাঙালি তার প্রতিভা দেখিয়েছে।
শিল্পীগণ তাদের শিল্পকলার মাধ্যমে স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। আজ কথা বলতে যাচ্ছি বর্তমান সময়ে শিশুদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয় একটি কলা নিয়ে যার নাম 'দেয়ালিকা'। দেয়ালিকা তৈরি অনেক পুরাতন একটি কলা।
তবে বর্তমান সময়ে শিশুদের মধ্যে এর ব্যাপক বিস্তার দেখা যায়। বিশেষ করে অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। উদ্বুদ্ধ করে অনেকগুলো পুরস্কার, সংবর্ধনা ও উপহার প্রদান করে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেয়ালিকা তৈরির আবির্ভাব দেখা দেয়।
আজকে দেয়ালিকা ডিজাইন সম্পর্কে আলোচনা করব। তাছাড়া দেয়ালিকা কিভাবে তৈরি করবেন দেয়ালিকা তৈরির নিয়ম জানিয়ে দেব।
আরো পড়ুন:
- কোন জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়?
- কোন প্রাণী ঘুমালে মারা যায়?
- মেয়েদের ভালোবাসলে কি পাওয়া যায়?
- নামাজের শেষে মোনাজাত কিভাবে করতে হয়?
- ডায়াবেটিস মাপার মেশিনের দাম কত?
দেয়ালিকা কি?
দেয়ালিকা এক প্রকার শিল্পকলার অন্তর্ভুক্ত। তবে এটি তেমন কোন বড় ধরনের শিল্প নয়। আনন্দ উপভোগের জন্য ও প্রতিভা বিকাশের জন্য এটি করা হয়ে থাকে। আমরা বিভিন্ন স্কুল কলেজের বা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে ছবি দেখে থাকি।
এই ছবিগুলো হাত দিয়ে তৈরি করা হয়। তারপর এগুলোকে সুন্দর করে ডিজাইন দিয়ে দেয়ালে টাঙ্গানো হয়। ছবিগুলো হতে পারে, গ্রাম বাংলার দৃশ্য নিয়ে, বঙ্গবন্ধু নিয়ে, খেলাধুলা নিয়ে, উক্তি নিয়ে, সামাজিক কোনো মেসেজ নিয়ে ইত্যাদি।
বিভিন্ন বিষয়ের উপর এই দেয়ালিকা তৈরি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বিশেষ করে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতীয় শোক দিবস, শেখ রাসেল দিবস, শিশু দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি এছাড়াও অনেক বিশেষ বিশেষ দিবসে দেয়ালিকা তৈরি করা হয়।
এ দেয়ালিকা তৈরির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় প্রধান শিল্পী হয়ে থাকেন শিশু ও শিক্ষার্থীরা।তারা নিজের প্রতিভা দেখিয়ে নিজের ক্লাসরুম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এগুলোকে সাজিয়ে দেয়।
দেয়ালিকা তৈরীর নিয়ম
দেয়ালিকা তৈরি তেমন একটি কোন কঠিন কাজ নয়। আবার করতে গেলে তেমন কোনো সহজ কাজও নয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন প্রচুর বিকশিত মানসিকতা, সৃজনশীলতা ও ধৈর্য এবং প্রতিভা। তা না হলে দেয়ালিকা তৈরি করা সম্ভব নয়।
তবে যদি আলোচনা করা হয় তাহলে, দেয়ালিকা তৈরির কিছু নিয়ম আছে। সব সময় এই নিয়মগুলো অনুসরণ করেই দেয়ালিকা তৈরি করা উচিত।
- বিষয় নির্বাচন
- ডিজাইন নির্বাচন
- কাজ ভাগ
- রং নির্বাচন
- স্থান নির্বাচন
1. বিষয় নির্বাচন
বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, আপনি কোন জিনিসকে মাথায় রেখে দেয়ালিকা তৈরি করছেন। যদি আপনাকে আপনার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিশেষভাবে ইঙ্গিত করে দেয়া হয়েছে যে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর দেয়ালিকা তৈরি করতে।
তাহলে অবশ্যই আপনাকে সে বিষয়ের উপরেই দেয়ালিকা তৈরি করতে হবে। আর যদি আপনি কোন প্রতিযোগিতায় দেয়ালিকা তৈরি করছেন। তাহলে দেখতে হবে সে প্রতিযোগিতা কোন বিষয় নিয়ে হচ্ছে।
অর্থাৎ প্রতিযোগিতা যদি স্বাধীনতা দিবস নিয়ে হয়। তাহলে দেয়ালিকা স্বাধীনতা দিবস এর উপর তৈরি করা উচিত। প্রতিযোগিতা যদি বিজয় দিবস নিয়ে থাকে। তাহলে বিজয় দিবস নিয়ে দেয়ালিকা তৈরি করুন।
এছাড়া অন্যান্য জিনিস থাকলে সেগুলো অনুসরণ করুন। তাহলে বিষয় নির্বাচন কিভাবে করতে হবে আপনি বুঝে গিয়েছেন।
2. ডিজাইন নির্বাচন
এই ডিজাইন নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকে পথ হারিয়ে ফেলেন। কেননা অনেক ধরনের ডিজাইন রয়েছে। কোনটি সিলেক্ট করবেন তা নিয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়। আপনি একটি সহজ সরল ডিজাইন সিলেক্ট করুন।
যেমন আয়তাকার কিংবা বর্গাকার ফ্রেমে নিজের দেয়ালিকা আঁকতে পারেন। এই ফ্রেম নির্বাচন করার পর আপনি এর ভিতরেই অনেক ডিজাইন করতে পারেন। ফ্রেমটিকে দুই ভাগ, তিনভাগ, চার ভাগ বা গোলাকার আকৃতি দিয়ে দেয়ালিকা আঁকতে পারেন।
অনেক সময় ইঙ্গিত বা এরো চিহ্ন দিয়ে দেয়ালিকা হয়। এই দেয়ালিকা গুলো মূলত উক্তি নিয়ে বা কোন সামাজিক কথা নিয়ে হয়ে থাকে। যেটি একটি পর আরেকটি একে অপরের সাথে জড়িত থাকে।
তবে আপনি যে ডিজাইন নির্বাচন করুন না কেন একটি কথা মনে রাখতে হবে। নিচের দিকে অল্প স্থান ফাঁকা রেখে দিতে হবে। সেই স্থানে আপনি নিজের নাম ও পরিচয় লেখবেন। বড় বড় চিত্রশিল্পীরা এভাবেই করে থাকে।
আপনি দেখবেন অনেকে নিজের ছবির নিচের দিকে নিজের নাম অথবা স্বাক্ষর দিয়ে থাকে। এভাবে ভালো করে বুঝা যায় যে ছবিটি কে এঁকেছে। তবে আপনি যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য দেয়ালিকা তৈরি করছেন।
তাহলে নিজের নাম, শ্রেণী ও রোল অবশ্যই লিখবেন। আর আপনি যদি গ্রুপ ওয়ার্ক করছেন। অর্থাৎ কয়েকজন সহপাঠী মিলে একসাথে দেয়ালিকা তৈরি করছেন। তাহলে নিচের দিকে একটু বেশি জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে।
যাতে সবার পরিচয় সেখানে লেখা যায়। তবে এমন হতে পারে সবার পক্ষ থেকে যে কোন একজনের নাম দিলেই হবে। যে আপনাদের গ্রুপকে লিড করছে তার নাম দিয়ে দিলেই হয়। কিংবা আপনাদের গ্রুপের একটি নাম বানিয়ে সেই গ্রুপের নাম দিয়ে দিবেন।
আশা করছি ডিজাইন নির্বাচন ও ডিজাইন করার ক্ষেত্রে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে। কিভাবে করবেন সেটিও বুঝে গিয়েছেন।
3. কাজ ভাগ
আপনারা যদি গ্রুপ হিসেবে কয়েকজন মিলে দেয়ালিকা তৈরি করছেন তাহলে এই জিনিসটি বুঝতে হবে। কেননা সঠিকভাবে কাজ ভাগ না করলে কাজ ভালো হবে না। সবাই মিলে সঠিক মত কাজ করলে কাজটি সুন্দর হয়।
ওনাকে সর্বপ্রথম দেখতে হবে আপনার গ্রুপের মধ্যে কোন ব্যক্তি কোন কাজে মাহির বা এক্সপার্ট। কেউ যদি ছবি আঁকতে এক্সপার্ট হয়। তাহলে তাকে ছবি আঁকার কাজ দিন। কেউ রং করতে ভালো হলে তাকে রং করতে দিন।
কেউ ভালো ডিজাইন করতে পারলে তার হাতেই ডিজাইনের কাজ দিন। কেউ ভালো উক্তি লিখতে পারলে তাকে উক্তি লেখার কাজ দিন। এতে করে সবাই সবার প্রতিভা মত কাজ পেয়ে যাবে।
সর্বশেষে তারা আপনাকে নিজের ১০০% কাজ করে দেবে। সবশেষ আপনি যখন সবার কাজ এক জায়গায় করবেন। তখন দেখবেন সেরাটা হয়েছে। এভাবেই কাজ ভাগ করতে হয়।
4. রং নির্বাচন
দেয়ালিকা তৈরির ক্ষেত্রে নানা ধরনের রং ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার বাজেট, রং করা ব্যক্তির অভিজ্ঞতা ইত্যাদি দেখে কোন রং ব্যবহার করবেন তা বিবেচনা করুন। দরকার পড়লে যে রং করবে তার উপর ছেড়ে।
সে ভালো করে জানে কোন রং তার ব্যবহার করলে ভালো হবে। সে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী রং ব্যবহার করবে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেন্সিল রং ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এতে তেমন একটি সুফল আসে না।
অনেকে মম ব্যবহার করে। কেউ পেস্ট কালার আবার কেউ ওয়াটার কালার ব্যবহার করে। আপনি আগে দেখুন কোন রং ব্যবহার করলে আপনার দেয়ালিকা সুন্দর দেখাচ্ছে। আগে সব কটি ট্রাই করুন।
শেষে যেটি ভালো ফলাফল দেবে সেটি ব্যবহার করুন। এতে কাজটি অনেক সুন্দর হবে।
5. স্থান নির্বাচন
স্থানে নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় চলে আসে। একটি হল দেয়ালিকা তৈরির জন্য স্থান নির্ণয়। অপরটি হল দেয়ালিকা লাগানোর জন্য স্থান নির্ণয়। এখন বলবেন দেয়ালিকা তৈরির জন্য স্থান নির্ণয় আবার কি।
আমি বোঝাতে চাচ্ছি আপনি যে জায়গায় নিজের দেয়ালিকা প্রস্তুত করবেন সে জায়গাটির বিষয়। যেখানে আপনি দেয়ালিকা তৈরি করবেন সে জায়গাটি অবশ্যই শান্ত সৃষ্ট হতে হবে। কেননা শান্তি না থাকলে কাজ ভালো হয় না।
আপনি যখন শান্তি মতো ভালো করে কাজ করতে পারবেন। কেবলমাত্র তখনই ভালো ফলাফল আসবে। আপনি কোলাহলের জায়গায় কখনো কাজ করতে পারবেন না। বিশেষ করে দেয়ালিকা তৈরির কাজে প্রচুর ধৈর্য লাগে।
এজন্য এমন একটি স্থান নির্বাচন করুন যেখানে আপনি কোন বিঘ্ন ছাড়াই কাজ করতে পারবেন।
দেয়ালিকা তৈরি শেষ। এবার পালা দেয়ালিকা লাগানোর জন্য সুন্দর একটি জায়গা খোজা। ধরেন আপনার দেয়ালিকা অনেক সুন্দর হয়েছে কিন্তু যদি সেটাকে সঠিক জায়গায় লাগাতে না পারেন তাহলে আপনার পরিশ্রম ব্যর্থ যাবে।
এমন জায়গায় লাগিয়ে ফেললেন যেখানে কারো নজর পড়ে না। তাহলে সে দেয়ালিকা তৈরির কোন মানে হয় না। আপনি দেয়ালিকা তৈরি করছেন দেয়ালের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য। তাই এমন একটি দেয়াল নির্বাচন করুন যেটি সবার চোখের সামনে থাকে।
তবেই আপনার দেয়ালিকা সবার মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে উঠবে। তাই সঠিক স্থান নির্বাচন করে আপনার দেয়ালিকা লাগিয়ে ফেলুন। দেখবেন সুন্দর দেখাবে।
কয়েকটি সুন্দর সুন্দর দেয়ালিকা ডিজাইন
নিচে আমি স্বাধীনতা দিবস, মুজিব বর্ষ, বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, শিশু দিবস ইত্যাদি ইত্যাদি অনুষ্ঠানের জন্য কিছু দেয়ালিকা ডিজাইন দিয়ে দিচ্ছি। আপনারা সেগুলো দেখে নিতে পারেন।