নামাজের শেষে মোনাজাত কিভাবে করতে হয়? (৩ টি পদ্ধতি আছে)
এ পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে নামাজের শেষে মোনাজাত কিভাবে করতে হয়? তার সাথে দোয়া কিভাবে করতে হয়? এবং দোয়া করার পদ্ধতি কয়টি সে বিষয়েও বলা হয়েছে
এমনই একটি বিষয় নিয়ে আজকে আলোচনা করব। বিষয়টি হচ্ছে, নামাজের শেষে মোনাজাত কিভাবে করতে হয়? নামাজের নিয়ম তো আমরা সবাই জানি। সবাই জানি যে, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে পড়তে হয়।
তবে আপনি কি জানেন নামাজ মানে প্রার্থনা? অর্থাৎ আমরা যে নামাজ পড়ি সেটি আসলে এক ধরনের প্রার্থনা। এরপর আসা যাক নামাজের পরে কি মোনাজাত করা যাবে? এ নিয়ে পক্ষের ও বিপক্ষের দল কি বলে?
অনেকের মতে নামাজের শেষে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করা নাজায়েজ। তবে বলে দিতে চাই নামাজের পরে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করা নাজায়েজ নয় বরং সম্পূর্ণ জায়েজ। এই নিয়ে অনেক দলিল রয়েছে, হাদিস দ্বারা সাবিত করা হয়েছে।
এটি শুধু আজকেই নয় বরং চৌদ্দশত বছর ও তারও বেশি সময় থেকে অর্থাৎ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় থেকে সম্মিলিতভাবে মোনাজাতের প্রথা চলে আসছে।
তাই আজ যদি কেউ আপনাকে এ বিষয় নিয়ে বিভ্রান্ত করতে চায় তাহলে সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং এ ধরনের ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে থাকুন। কারণে এরা সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে ফেতনা-ফাসাদ ছড়াতে এসেছে। এবার চলুন আসল বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক।
নামাজের শেষে মোনাজাত কিভাবে করতে হয়?
নামাজের শেষে মোনাজাতের কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। যে কোন একটি নিয়ম মেনে চললেই হবে। এই নিয়ে ফতুয়াবাজি করার কোন দরকার নাই। কারো ইচ্ছে হলে একাকী মোনাজাত করতে পারেন। আবার কারো ইচ্ছা না থাকলে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করতে পারে। দুটোই জায়েজ।
নামাজের সময় মোনাজাতের নিয়ম গুলো হল :
- একাকী মোনাজাত করা : ধরেন আপনি দেরি করে মসজিদে প্রবেশ করেছেন এবং কয়েক রাকাত আপনার ছুটে পড়েছে। এমতাবস্থায় ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে নিলেও আপনাকে বাকি রাকাত গুলো আগে আদায় করতে হবে তারপর আপনি সালাম ফিরিয়ে নিতে পারবেন। তখন তো আপনি সম্মিলিতভাবে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ সময় আপনাকে একাকী মোনাজাত করতে হবে। আবার, আপনি যদি আহলে হাদিস বা সালাফী জামাতের অনুসারী হলে আপনাদের শায়খের ফতুয়া মতে সম্মিলিতভাবে আপনারা মোনাজাত করবেন না। এ সময় একাকী মোনাজাত করতে পারেন। তবে যারা সম্মিলিত মোনাজাত করবে তাদেরকে আপনারা খোঁটা দিতে পারবেন না। কেননা দুটোই হাদিস দ্বারা সাবেত আছে।
- ইমামের সাথে শরিক হয়ে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করা : আপনি সঠিক সময়ে জামাতে অংশগ্রহণ করেছেন এবং ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর সাথে আপনিও নিজের সালাম ফিরিয়েছেন। ফরজ নামাজের পর কিছু দোয়া ও দরুদ পড়তে হয়। ইমাম সাহেব এগুলো পড়ে ফারেক হয়ে গিয়েছে। এরপর তিনি মোনাজাতের জন্য হাত তুললেন। সকল মুসল্লী ইমাম সাহেবকে অনুসরণ করে দোয়ার জন্য হাত উঠিয়ে নিল। তাদের সাথে আপনিও শরিক হয়ে গেলেন। এভাবে আপনি সম্মিলিতভাবে ইমাম সাহেবের সাথে ও ইমাম সাহেবের দোয়ার সাথে নিজের দোয়া করে নিলেন।
উল্লেখ্য যে : সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার চেয়ে মাবুদের কাছে একাকী দোয়া করা সওয়াব বেশি। তবে বড় বড় উলামারা বলেছেন যে, যেখানে ৪০ জন মুমিন বান্দা থাকে সেখানে একজন আল্লাহর অলি থাকে।
আর আল্লাহ তা'আলা বলেন, যেখানে আল্লাহর অলি থাকেন সেখানে আল্লাহর রহমত বর্ষণ হতে থাকে। আপনি তো আল্লাহর অলিকে চিনতে পারবেন না। কিন্তু এতটুকু তো ভরসা রয়েছে যে আল্লাহর রহমত সেখানে বর্ষিত হচ্ছে।
আর আল্লাহর রহমত যেখানে বর্ষিত হবে সে জায়গায় দোয়া অবশ্যই কবুল হয়। এজন্য সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার লাভ এটাই যে যদি আল্লাহর কোন নেক বান্দা সেখানে থাকেন তার অসিলাতে আপনার দোয়াও কবুল হয়ে যাবে।
তো চলুন এখন বলি নামাজের শেষে মোনাজাত কিভাবে করতে হয় নিয়ম সম্পর্কে।
হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এরশাদ করেন, যে তোমরা দোয়া চাওয়ার সময় দোয়ার আগেও পিছনে দরুদ শরীফ পড়ে নেবে। কারণ বান্দা যখন দোয়া করে তা আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলতে থাকে।
আর যখন তার সাথে দুরুদ শরীফ যোগ হয় তখন এটি আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। দুরুদ শরীফ হচ্ছে এমন একটি জিনিস যেটি কবুল হবেই হবে। আপনি নামাজ পড়ছেন কিন্তু আপনার নামাজ কবুল হচ্ছে কিনা আপনি জানেন না।
তবে আপনি দুরুদ শরীফ পড়ছেন, আপনি সম্পূর্ণ শিওর থাকেন যে আপনার দুরুদ শরীফ পাঠ করা কবুল হচ্ছে। কেননা দুরুদ শরীফই একমাত্র আমল যেটি আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না। তাই দুরুদ শরীফের অসংখ্য ফজিলত রয়েছে।
হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে, আমাদের মত পাপী বান্দাদের দোয়া আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলতে থাকে। আমরা যদি সামনেও পিছনে দুরুদ শরীফ পাঠ করে দোয়া করি তাহলে দুরুদ শরীফ আমাদের দোয়াকে হেফাজত করে আল্লাহ দরবারে নিয়ে যাবে।
আর আল্লাহ দরবার থেকে কখনো কোন বান্দার দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। এজন্য যদি দোয়া কবুল করাতে হয় তাহলে অবশ্যই দরুদ শরীফ ছবি পাঠ করতে হবে। তাহলে আমরা জেনে গেলাম নামাজের শেষে মোনাজাত কিভাবে করতে হয়।
নামাজের মোনাজাতের দোয়া বাংলা
বন্ধুরা, নামাজে মোনাজাতের দোয়া অনেকগুলো রয়েছে। আপনার যদি ইচ্ছা হয় আপনি সেটি পড়তে পারেন। কোরআনের যেকোনো আয়াত পাঠ করেও আপনি মোনাজাতের দোয়া পড়তে পারেন। তবে মোনাজাতের জন্য কিছু দোয়া আমি জানিয়ে দিচ্ছি।
- নামাজের মোনাজাতে দোয়া তে আপনি "রাব্বির হামহুমা রাব্বায়ানি সাগিরা" এই দোয়াটি পড়তে পারেন। এতে আপনার মা বাবার জন্য দোয়া রয়েছে।
- এ পরে পড়তে পারেন সেটি হচ্ছে, "আস্তাগফিরুল্লাহা লিওয়ালি ওয়ালি দাইয়া ওয়ালি জামিইল মুমিনীন ওয়াল মুমিনাত মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত ওয়াল আহ ইয়ায়ি মিনহুম ওয়াল আমওয়াত।" এই দোয়াটি পড়তে পারেন এই দোয়াটিতে আপনার, আপনার মা-বাবার, সম্পূর্ণ উম্মতে মুসলিমার এবং যারা কবরবাসী হয়েছেন সবার জন্যই দোয়া করা আছে। তাই সর্বোত্তম হচ্ছে এই দোয়াটিও পাঠ করুন। এতে সমস্ত মুসলমান দের জন্য দোয়া হবে। আর মুসলমানদের জন্য দোয়া করার বরকতে আপনার উপর আল্লাহর রহমত নাযিল হবে।
- এরপর পড়তে পারেন আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : ইয়া আরহামার রাহিমীন এবং ইয়া রাব্বানা উভয় গুণবাচক নামকে পাঁচবার করে পড়ে নিবেন এতে আল্লাহর রহমত জেগে উঠবে।
- এরপরে যেটি পড়তে পারেন সেটি হচ্ছে কোরআনের কোন আয়াত অথবা জানাজার দোয়া কিংবা আয়াতুল কুরসি। কারণ এই দোয়াতে ও সকল কিছুই চাওয়া আছে। যার কারণে আপনি এই দোয়া পাঠ করলেই অনেক রহমত পেতে পারবেন।
- এরপর সব শেষে যে দোয়াটি পড়বেন সেটি হচ্ছে, "সুবহানা রাব্বিকা রাব্বিল ইজ্জাতি আম্মা ইয়াসিফুন ওয়াস সালামুন আলাল মুরসালীন ওয়াল হামদুলিল্লাহ হি রাব্বিল আলামিন।" এই দোয়াটি পড়ার পর দুরুদ শরীফ পড়ার মাধ্যম আপনার দোয়া শেষ করতে পারেন।
Conclusion
উপরে নামাজের শেষে মোনাজাত নিয়ে সম্পূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে। নামাজের শেষে মোনাজাত কিভাবে করতে হয়? কোন দোয়া পাঠ করতে হয়? কিভাবে পাঠ করতে হয়, সামনে পিছে কি কি পড়তে হয় সবকিছু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়া দোয়া কবুল হওয়ার জন্য বিশেষ পদ্ধতি গুলো বলা হয়েছে। যেগুলো সাহাবী ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে। আশা করছি এগুলো আপনার উপকারে আসবে। কোন কিছু জানার বা বলার থাকলে অবশ্যই নিজের কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। বা প্রশ্ন করা থাকলে প্রশ্ন করতে পারেন।
FAQ
1. ফরজ নামাজের পর মুনাজাত করা যাবে কি?
উত্তর : হ্যাঁ অবশ্যই, ফরজ নামাজের পর মোনাজাত করা যাবে। এ মোনাজাত আপনি একাকী করতে পারেন আবার সম্মিলিতভাবেও করতে পারেন এতে কোন সমস্যা নেই। বরং দুটোই পদ্ধতি কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা সাবিত আছে।
2. দোয়া কিভাবে করতে হয়?
উত্তর : দোয়া কিভাবে করতে হয় এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে করা হয়েছে। তবে এখানেই বলে দিচ্ছি আবার দোয়া কিভাবে করবেন। সর্বপ্রথম দোয়ার সামনেও পিছনে দরুদ শরীফ পড়তে হবে এটি খেয়াল রাখবেন। অর্থাৎ দোয়া শুরু করবেন দরুদ শরীফ দিয়ে এবং শেষও করবেন দরুদ শরীফ।
দোয়া করার তিনটি পদ্ধতি আছে। পদ্ধতিগুলো হল :
- বুক বরাবর দুই হাত উঠিয়ে। হাতের পাতার কিবলা যেন আকাশের দিকে থাকে এবং দুই হাতের মধ্যে কিছুটা ফাঁকা স্থান থাকবে। হাতগুলো যেন বগলের সাথে না লেগে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- আরেকটি পদ্ধতি হলো হাত সিনা বরাবর উঠাতে হবে। এক্ষেত্রেও হাতের কিবলা আকাশের দিকে থাকবে। হাত দুটি খোলা থাকবে এবং দুটি হাতের মধ্যে কিছুটা ফাঁকা স্থান বিদ্যমান থাকবে। এখানেও হাতগুলো যেন বগলের সাথে না লেগে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে দুই হাতের কিবলা আকাশের দিকে করে হাত যতদূর পারেন উঠাতে পারেন। এতে আল্লাহর প্রতি বান্দার চাওয়ার গাম্ভীর্য অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। স্বয়ং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ পদ্ধতিতে দোয়া করেছেন।
3. মোনাজাত শেষ করার দোয়া
মোনাজাত শেষ করার দোয়া বলতে কোন দোয়া নেই। তবে সর্বোত্তম হচ্ছে দুরুদ শরীফ পাঠ করে মোনাজাত শেষ করা। কিন্তু দরুদ শরীফের আগে আরেকটি দোয়া পড়তে পারেন। দোয়াটি উপরে দেওয়া আছে আমি আবারও এখানে দিয়ে দিচ্ছি।
"সুবহানা রাব্বিকা রাব্বিল ইজ্জাতি আম্মা ইয়াসিফুন ওয়াস সালামুন আলাল মুরসালীন ওয়াল হামদুলিল্লাহ হি রাব্বিল আলামিন।"