চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম | চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম | চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা
    আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা, স্বাগতম আমাদের ওয়েবসাইটে আজকে আমরা যে টপিক নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি সেটি হল - চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম এবং সাথে আরো জানবো চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা তো চলুন জেনে নেয়া যাক যে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম কি এবং চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা।

    বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা সকলেই অনেক সর্তকতা অবলম্বন করি. "স্বাস্থ্যই সম্পদ", প্রবাদ বাক্যটি আমরা সকলেই শুনেছি এবং প্রাক্টিক্যালি আমরা সকলেই এটি অনুভব করতে পেরেছি। যতই ধনী ব্যক্তি হোক না কেন যদি তার স্বাস্থ্য ঠিক নেই তার টাকা পয়সা কোনো কাজে আসবে না। কারণ দুনিয়ার টাকা পয়সা দিয়ে দুনিয়ার সুখ কেনা যায় স্বাস্থ্য কেনা যায় না। স্বাস্থ্য অনেক মূল্যবান একটি জিনিস, এটিকে ঠিক রাখা তেমনি গুরুত্বপূর্ণ ও একটি কঠিন ব্যাপার। বর্তমান সময়ে খাদ্যের গুণমান অনেক নিম্নমানের এজন্য সবারই কোনো না কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য চিয়া সিড অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস।

    আরো পড়ুন: 

    চিয়া সিড কি?

    আজ আমরা জানবো চিয়া সিড সম্পর্কে। সর্বপ্রথমেই জেনে নেই চিয়া সিড কি? চিয়া সিড বা চিয়া বীজ মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিস্পানিকা উদ্ভিদের বীজ। এই অতি উপকারী বিজটির আদি জন্মস্থান সেন্ট্রাল আমেরিকা(মধ্য আমেরিকা) এবং সেখানকার প্রাচীন আদিবাসী অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকায় এ বীজ অন্তর্ভুক্ত থাকার প্রমান পাওয়া যায়।

    প্রাচীন মায়া এবং অ্যাজটেক জাতির মানুষ চিয়া সিডকে সোনার থেকেও মূল্যবান মনে করত। তারা বিশ্বাস করতো এটা তাদের শক্তি ও সাহস যোগায়। চিয়া সিড সব ধরনের আবহাওয়াতেই জন্মাতে পারে এবং এতে পোকা মাকড়ের আক্রমণ হয় না। চিয়া বীজ সাধারণত সাদা এবং কালো রঙের হয়ে থাকে এবং তিলের মত ছোট সাইজের হয়ে থাকে। 

    চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম   চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা


    চিয়া সিড ও তোকমা নিয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা আছে। অনেকেই চিয়া সিড ও তোকমাকে একই বলে মনে করেন। কিন্তু চিয়া সিড তোকমার চেয়ে আকারে ছোট হয়। কিন্তু পুষ্টি ও মানের দিক দিয়ে উভয়ই সমান। চিয়া একটি সুপার সিড যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড। কোয়েল সেটিং, ক্যাম্পো ফ্রেরোল, ক্লোরোজেনিক এসিড এবং ক্যাফিক্যাসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং দ্রবণীয় অদ্রবণীয় ফাইবার থাকে।

    চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম কি? চিয়া সিডের  ব্যবহার

    চিয়া সিড সরাসরি যে কোনো ফলের জুসের সাথে পান করা যায়।  শুধু পানিতে মিশিয়েও পান করা যায়।চিয়া সিডের নিরপেক্ষ সাধের কারণে এটা সব ধরণের খাবারের সাথে মিশিয়ে খাবার উপযুক্ত। বেক করা খাবার যেমন বিস্কুট কেক ইত্যাদি, সুপ্, স্যালাড ইত্যাদির সাথে মিশিয়েও চিয়া সিড খাওয়া যায়। 

    ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম 

    চিয়া সিডস যথাযথ পরিমাণে প্রোটিন আছে। প্রোটিন স্বাস্থ্যের জন্য সব দিক থেকে উপকারী। ওজন কমানোর দিক দিয়ে এটি অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চেয়ে অনেক এগিয়ে। হাই প্রোটিন যুক্ত খাবার ক্ষুধা কমায়। দেখা গেছে এতে খাবারের প্রতি আকর্ষণ প্রায় 60% কমায় ও রাতের বেলা টুকটাক খাবারের ইচ্ছা 50% কমায়। 

    ওজন কমাতে চিয়া সিড যেভাবে খাবেন এক গ্লাস পানিতে 1 চা চামচ চিয়া বীজ দিয়ে নেড়ে 30 মিনিট রেখে দিন। পরে ছেঁকে নিয়ে পানি পান করুন। স্বাদ বৃদ্ধি করতে চাইলে এতে লেবুর রস, কমলার রস, গোলমরিচ গুঁড়া বা মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। 

    চিয়া সিড এর উপকারিতা কি কি?

    তো প্রিয় বন্ধুরা, চিয়া সিড কি ইতোমধ্যে আপনারা জেনে নিয়েছেন এবং এটি কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটিও জেনেছেন। এখন আমরা জানবো চিয়া সিড এর উপকারিতা কি কি তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক চিয়া সিড এর উপকারিতা -

    • এটা শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে
    • চিয়া সিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করে
    • চিয়া সিড ওজন কমাতে সহায়তা করে
    • চিয়া সিড ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখে। ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়
    • চিয়া বীজ হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উপকারী
    • চিয়া সিড মলাশয় পরিষ্কার রাখে। ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
    • চিয়া সিড শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় 
    • চিয়া সিড প্রবাহজনিত সমস্যা দূর করে
    • চিয়া সিড আপনার ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে
    • চিয়া বীজ ক্যান্সার রোধ করে
    • চিয়া সিড হজমে সহায়তা করে
    • চিয়া সিড হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করে
    • চিয়া সিড এটেনশন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসর্ডার দূর করে
    • চিয়া সিড ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে
    • চিয়া সিড গৃহপালিত পশুর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়
    চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম   চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা


    বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম?

    বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিড খাওয়ার কোন বিশেষ নিয়ম নেই। তবে যেহেতু এটি একটি পুষ্টিকর খাবার বা বীজ তাই সকলেই এটি খেতে পারেন। যেমনভাবে আমরা সাধারণ খাবার খেয়ে থাকি সেভাবেই এ খাবারটিও খাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি যে বিভিন্ন ফলমূল এর রস কিংবা বেক করা খাবার বিস্কুট ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে চিয়া সিড সেবন করা যাবে। 

    সেভাবে আপনার বাচ্চা কিভাবে কম্ফোর্টেবল অনুভব করবে অর্থাৎ যেগুলো খাবার খেতে পছন্দ করে তার সাথে মিশিয়ে আপনি এই বীজটিকে খাওয়াতে পারেন। তবে বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা জুস খেতে পছন্দ করে। আমার মতে তাদেরকে বিভিন্ন ফলের জুসের সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়ালে ভাল হয়। 

    চিয়া সিড এর অপকারিতা কি কি?

    চিয়া সিড এর উপকার আমার উপরে পড়ে নিয়েছি। চিয়া সিড আমাদের শরীরের অনেকগুলো উপকার করে থাকে আমাদের দেহের ওজন কমায়, পেট পরিষ্কার রাখে, হাড়ের গঠন ঠিক রাখে, ডায়াবেটিস থেকে আমাদের রক্ষা করে ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক উপকারে আসে এই চিয়া সিডটি। তবে চিয়া সিড এর অপকারিতার কথা বলতে গেলে এর উপকারের পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। 

    আমরা যদি চিয়া সিড সঠিক পরিমাণে সেবন না করি অর্থাৎ পরিমাণের চেয়ে বেশি সেবন করে নেই তাহলে এর কিছু দুষ্পরিনাম রয়েছে। আমাদের শরীরকে যতটুকু এর প্রয়োজন আমরা ততটুকুই গ্রহণ করব তার থেকে বেশি গ্রহণ করব না। গরম পানির মধ্যে এক চামচ চিয়া সীড মিশিয়ে গ্রহণ করা সব থেকে ভালো। তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা দুই চামচ পর্যন্ত নিতে পারে।

    চিয়া সীড বেশি পরিমাণে সেবন করে নিলে এর নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় -

    • লুজ মোশন হতে পারে
    • যারা বেশিদিন ধরে কোনো ওষুধ সেবন করছেন তাদের জন্য এটি সেবন করা ঠিক হবে না। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
    • গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে, মাথা ঘুরতে পারে এবং লুজ মোশন ও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলারা নিজেকে দুর্বল করতে পারেন তাই এটি সেবন করার আগে গর্ভবতী মহিলাদেরকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
    উপরে কারণগুলো ছাড়া চিয়া সিড এর আর কোন অপকারিতা নেই অর্থাৎ আর কোন ভয় পাওয়ার কারণ নেই। 

    চিয়া সিড কত পরিমাণে খেতে হবে? চিয়া সিড সেবনের বিধিমালা 

    স্বাভাবিকভাবে গরম পানির সাথে যে কেউ চিয়া সিড সেবন করতে পারেন। হালকা কুসুম গরম পানির সাথে দুই থেকে তিন চামচ চিয়া সিড সেবন করা অনেক উপকারী। যার পরিমাণ 30 থেকে 40 গ্রাম হতে পারে অর্থাৎ 2 থেকে 3 চা চামচ। তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা চার চামচ পর্যন্ত সেবন করতে পারেন। চিয়া সিড সেবন করার সবথেকে ভাল পদ্ধতি হচ্ছে গরম পানির সাথে এটি সেবন করা। এজন্য হালকা কুসুম গরম পানিতে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রাখতে হবে, একটু পরে নরম হয়ে ফুলে যাবে তারপর এটি পানিসহ সেবন করতে হবে। 

    চিয়া সিড খাওয়ার সময়

    যারা ঘুমের কারণে চিয়া সিড সেবন করেন তাদের ক্ষেত্রে রাতে ঘুমানোর আগে চিয়া সিড সেবন করা ভালো। তবে যারা প্রোটিন, স্বাস্থ্য ঠিক রাখা, ওজন কমানো, ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণে চিয়া সিড সেবন করেন তাদেরকে উচিত সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার পর চিয়া সিড সেবন করা। এতে তাদের সারাদিনে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং সকালবেলা চিয়া সিড সেবন করার ফলে সারাদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাটবে। সারা দিন শরীর থেকে টক্সিন নির্গত হবে যার ফলে সব সময় আপনি একটিভ থাকবেন।

    চিয়া সিড দাম কত?

    চিয়া সিড এর কোন ফিক্সড দাম নয়। তবে ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে চিয়া সিড এর দাম বলতে পারি -

    চিয়া সিড ৫০০ গ্রামের দাম = ৫৫০ টাকা (500 gm - 550 Tk.)
    চিয়া সিড ১ কেজির দাম = ১১০০ টাকা  (1000gm/1 Kg - 1100 Tk.)





    LikeYourComment